|| সৎপথে ||
- nitishb
- Oct 21, 2020
- 3 min read
Updated: Jan 23, 2022
Disclaimer: Aesop's Fables-এর 'The Honest Woodcutter' অবলম্বনে |

বহুকাল আগে এক নিরীহ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছিলো জীবিকার সন্ধানে | তার দিন কাটতো গাদা গাদা লাইন নিস্প্রান 'কোড' লিখে আর একগাদা অবান্তর 'ভার্চুয়াল' তথা 'ফিজিক্যাল' ‘মিটিং’-য়ে অংশ নিয়ে | কাজের প্রতি আশাহীন হওয়া সত্ত্বেও; সে বীরযুবক মুখে নিষ্পৃহতার চাদর চাপিয়ে দিনের পর দিন ঘন্টার পর ঘন্টা সৎ-উপায়ে অর্থাৎ, যতদুর সম্ভব 'স্ট্যাক-ওভারফ্লো'-তে 'সার্চ' না করে 'কোড চেক-ইন' ও 'এফোর্ট-এস্টিমেশন' করে যাচ্ছিলো | বছরে দুবার মিথ্যে বলে 'আনপ্লানেড সিক-লিভ' নেওয়া ছাড়া আর কোনো দুস্কর্মে সে কোনোদিন সামিল হয়নি, বড়োজোর দিনে দুবার চা-সিগেরেটটা খেতে নেমে ‘ম্যানেজার’ তথা ‘টীম-লিডের’ বাপ-বাপান্ত করতো এই যা | কিন্তু তার এই সুখ-দুঃখ মেশানো জীবনে, অন্ধকারের কালো ঘন ছায়া রূপে নেমে এলো করোনা মহামারী | ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেলো তার জীবন | ‘উইকেন্ড’-এ বালিশ উল্টে শুয়ে থাকা, দিনভর বসে ‘নেটফিলিক্স’ কপচানো - সবের ইতি ঘটলো | 'পেন্টিয়াম প্রসেসর' -এর ল্যাপটপ ধরিয়ে অফিস তাকে বসিয়ে দিলো ২৪x৭ কাজে | শেষ আসার আলোটুকু থেকেও বঞ্চিত হল সে |
হতাশ হয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ করোনা-লকডাউনের শেষ হওয়ার পরেই ফিরে গেলো নিজের গ্রামে | "কাজ যখন সারাক্ষন করতেই হবে, ঘরে থেকেই করি’ - এইভেবে | আর তাছাড়া ‘জিও’-তো ধান-ধান্ধান রবে সর্বত্র বাজছেই |
একদিন, সেই গ্রামে হল 'লোডশেডিং' | খাস কলকাতার লোকেরা এই দুঃখ কিছুকাল ভোগ করেন না বটে, তবে গ্রামে আজও মাঝে-সাঝে 'লোডশেডিং' হয়ে থাকে | এদিকে যুবক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ অফিসের 'এ/সি'-র হাওয়ায় বছর-দুয়েকে এতো অভস্ত হয়ে পড়েছিল যে ছোটবেলার কষ্ট প্রায় ভুলতে বসেছিল | অগত্যা, গরমে নাজেহাল হয়ে 'ল্যাপটপ'-এর 'ফুল-চার্জ'-এর ভরসায় সে বেরিয়ে পড়লো ঘর ছেড়ে; গিয়ে বসলো ঝিলের ধারে বুড়ো বট গাছটার তলায় | খুশি হল, তার গ্রামে আজ ঝিল আছে ভেবে, শহরে জলাভূমি হলে 'গার্বেজে' ভরে 'হাউসিং-কমপ্লেক্স' হয়ে যেত এতদিনে | সযত্নে একখানি 'মিটিং' শেষ করে আরেকটি শুরু হওয়ার আগে কয়েক লাইন 'কোড' লেখার চেষ্টা করছিলো সে | হতচ্ছাড়া 'জিও' ঝিলের হাওয়ায় আপ্লুত হয়ে, কি জানি কোন কুবুদ্ধিতে মাঝেমাঝে 'ইন্টারনেট-কানেকশন'-টি কেটে দিচ্ছিলো, ফলে 'স্ট্যাক-ওভারফ্লো' ঘাটতে গিয়ে যুবকের কপালে জুটছিল 'গুগল ক্রোম'-এ ডাইনোসর নিয়ে ছেলেখেলা | রাগে,অভিমানে দাঁত-খিচিয়ে 'ল্যাপটপ'-এর 'কীবোর্ড'-এ বাড়ি মারলো যুবক, 'ল্যাপটপ' হতোভাগাও কোল টপকে গিয়ে পড়লো ঝিলের জলে, নিমেষে গেলো ডুবে | ছোটবেলায় জোতিষীকাকু যুবকের মাকে বলেছিলেন, তার "জল থেকে ভয়" | তামার আংটিও পড়ে ঘুরতে হচ্ছে তাকে তবে থেকেই | এ নিয়ে কলেজে কিছু শহুরে ভ্রূকুটিরও শিকার হতে হয়েছে যুবককে, জবাবে সে ভেঙিয়েছে শহুরে ছেলেদের গাছ না চড়তে পাড়ার অক্ষমতাকে | কিন্তু আজ, সেই তামার আংটিই কাল হল | সাঁতার না জানায় হা-হুতাশ করতে লাগলো সে, 'টীম- লিড' জানলে, এবার বাপ-বাপান্তটা তারই কপালে লেখা | সেই ঝিলে বাস করতেন ঝিল-দেবী ঝিলিমা | যুবকের হা-হুতাশে তার দিবানিদ্রা গেলো ঘুচে | দেবী দেখা দিয়ে ধমকালেন ছোকরাকে, “বলি হল কিরে? বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস কেন হতভাগা?” কেঁদো-কেঁদো গলায় ছোকরা থুড়ি, যুবক জানালো পুরো ঘটনাটা | বললো, “ঝিলিমা-মা উদ্ধার করো, এনে দাও টপাটপ – আমার ওই 'ল্যাপটপ' |”
ঝিল-দেবী ঝিলিমা, যুবকের ছড়ায় খুশি হয়ে ঝিলে হাত ডুবিয়ে তুলে আনলেন একখানি বস্তু, দূর থেকে দেখতে যা দেশলাই-এর বাক্সের মতো | যুবকের দিকে তাকিয়ে দেবী বললেন, “খোকা, এটা কি তোমার 'ল্যাপটপ'?” ঝিলিমা-মার প্রযুক্তিজ্ঞানের অভাবে হতাশ হয়ে যুবক বললো “না মা, এটা আমার নয়, আমি সৎ, অন্যের জিনিস মিথ্যে বলে নেবো না ” | দেবী হাসলেন, আরেকটিবার হাত গলিয়ে জল থেকে এবার তুলে আনলেন, অনেকটা 'ক্যালকুলেটর'-এর মতো দেখতে একটা বস্তু | আবার হতাশ হল যুবক, তবে এবারও তা প্রকাশ করলো না | পাছে, দেবী রেগে যান | “না মা, এটাও আমার নয়, তাই নিতে পারবো না”| তৃতীয়বার দেবী তুলে আনলেন তার 'ল্যাপটপ' খানি, দীর্ঘশ্বাস ফেলে যুবক বললো “মা তুমি ধন্য - আনলে 'ল্যাপটপ' আমার জন্য” | ছোকড়াটি সৎ, তারপর গাদা-গাদা সারহীন 'কোড' লিখেও তার মধ্যেকার কবিটা মরেনি দেখে খুশি হয়ে, দেবী তাকে তিনটি বস্তুই দিতে চাইলেন |
যুবক বললো, “ঝিলিমা-মা ধন্যবাদ, কিন্তু আপনি বোধহয় ঠিক 'আপডেটেড' নন, করোনা উঠলে আমি আপনাকে একটি সস্তা 'জিও-সিম' ভরা 'মোবাইল' কিনে দেব, তাহলে 'গুগল' ঘেটে আপনি 'ল্যাপটপ'-এর সাথে 'ক্যালকুলেটর' আর দেশলাইয়ের বাক্সের পার্থক্য বুঝতে শিখবেন | ঝিলিমা-দেবী তো একথা শুনে খোঁচে বোম্ব | সদ্য '4G - সিম'-ওয়ালা 'স্মার্টফোন' নিয়েছেন তিনি, কবে 'জিও' 5G দেবে তার অপেক্ষায় আছেন, আর এই কালকের ছোকরার এতো বড়ো সাহস তাকে মূর্খ ভাবছে | গর্জে উঠলেন দেবী “মর্কট মিনসে, দু-কলম কবিতা কপচে আর 'ম্যাট্রিক্স-ফাইভ-ইয়ার্স সল্যুশন' টুকে 'বি-টেক' পাশ করে নিজেকে 'আইনস্টাইন' ভাবিস!!! যে-দুটো জিনিস প্রথমে দেখলাম ওগুলো 'আই-বি-এম'-এর ‘আপকামিং' ত্রিললেনিয়াম' আর 'বিললেনিয়াম' 'মডেল', আমি দৈববলে ভবিষ্যৎকাল থেকে নিয়ে এসেছিলাম”, এই বলে দেবী অদৃশ্য হলেন, নিয়ে গেলেন 'পেন্টিয়াম' 'ল্যাপটপ' টাও | সারমর্ম : "সর্বদা সৎ থেকো, তাহলে পুরস্কৃত হবে" | সারমর্মের আধুনিকীকরণ: "সর্বদা সৎ থেকো এবং নিজের পেশার বিষয়েও অপগন্ড হয়ো না, তাহলেই পুরস্কৃত হবে" |
Comments