ফোরনং খাবো......
- nitishb
- Jan 9, 2018
- 2 min read
Updated: Jan 23, 2022
গল্পের শুরুটা কান্না দিয়ে আপাতত তাই মনে পড়ছে, আসলে শুনেছিলাম সে প্রায় একযুগ আগে কৈশোরবস্থায়(থুড়ি, টিনেজার ছিলাম) বোধহয় |

ঘন ঘন যাওয়া হতো মেজোজ্যাঠার বাড়ি, সেখানেই আলাপ হয়েছিল একটি মজার ব্যক্তিত্বের সাথে তার কাছেই শোনা | তবে যোদ্ধার থেকে যেমন এযুগে যুদ্ধবিদ্যা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেরকমই এক্ষেত্রে আমার স্মৃতির মনিকোঠায় গল্প-খুড়োর চেয়ে তার গল্পটি বেশি পরিমান স্থান অর্জনে সক্ষম হয়েছে |
“ফোরনং খাবো","ফোরনং খাবো","ফোরনং আমি খাবই খাবো |”
যাই হোক, গল্পে ফেরত আসা যাক, - একটি (বেয়ারা)ছেলে, বছর পাঁচেক বয়স; সকাল থেকে কেঁদে চলেছে অনবরত | মা বোঝায়, বাবা বোঝায়, দাদা বোঝায়, এমনকি পাশের বাড়ির মাসিও বলে, 'খোকা তোর কি চাই বল | খেলনা দেব, খাবার দেব, যা চাইবি তাই দেব | তবু তুই চুপ কর' (সাধে বলে, মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি) | ছেলে তবু থামবে না, কেঁদেই চলে, শুধু একই আবদার - "ফোরনং খাবো","ফোরনং খাবো","ফোরনং আমি খাবই খাবো" | সবাই ওদিকে ভেবে আকুল "ফোরনং" তা আবার কি?
বাবা বলে, 'হয়তবা লজেন্স হবে নতুন কোনো' | মা বলে, 'না গো না, সোনার আমার তা চলেনা, এতো আমার জানা জিনিস, ঐ পালের দোকানের মিঠাই', মাসির আবার উপরি চালাক হাতে করে পুতুল এনে খোকার হাতে দিয়ে বলে, 'বুঝেছি গো বুঝেছি, তোমরা কিছু বোঝোনা | ও ছেলেমানুষ, ভুল করে খেলনা কে খাবার ভেবে খেতে চাইছে' | কিন্তু সমস্ত ফন্দি-ফিকির বৃথা যায়, খোকা কি চাইছে , এই ধাঁধার নিস্পত্তি হয় না | ওদিকে খোকা নাছোড়বান্দা; কান্না থামাবে না, "ফোরনং খাবো","ফোরনং আমি খাবই খাবো" |
জানিনা শার্লক হোমস বা ফেলুদা, এ ধাঁধার সমাধান নিমেষে করতে পারতেন কিনা | তবে চা-পোষা বাঙালি বাবা-মার (এবং 'দরদী' মাসিরও) এর সমাধান করতে বেগ পেতে হয় |
নাটকের যবনিকাপাত করার আগে, গুরুত্ব বোঝাতে চলে আসি ১৯৯০-র বাংলার মধ্যবিত্তের জীবনের প্রেক্ষাপটে | টিভি ছিল এতো ঘরে ঘরে; স্মার্টফোন তো আবিষ্কার হয়নি, ল্যান্ডফোন ছিল, কিন্তু ছিল না প্রায় কারও ঘরেই | সুতরাং স্কুল থেকে ফিরে স্নান-খাওয়া সেরে এবং বিকেলে মাঠে খেলতে যাওয়ার আগের মাঝের সময়টার সিংহভাগই কাটতো আমাদের জানলার ধারে বসে; 'অমল ও দইওয়ালা'র অমলের মতো খিড়কি থেকে দুনিয়া দেখে | তখনও 'millennials'-দের মতো ইঁদুর-দৌড়-এ জুড়তে মা-বাবারা আমাদের দশটা-পাঁচটা স্যারদের কাছে পাঠাতো না | গল্পের শিশুটিও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ছিল না | শৈশবে মাধুর্য্য ছিল, সুখ ছিল, এককথায় আমাদের একটা শৈশব নামে একটা বস্তু ছিল |
এইরকম এক দুপুরবেলায় 'মুন্না-বাবু লো' হাঁকতে হাঁকতে একজন হেঁটে চলেছিল রাস্তার ধার দিয়ে, হাতে একটা ছোট ঘন্টি টিন-টিন বাজিয়ে | অর্ধডিম্বাকৃত ছাউনির ছোট্ট ঠেলা-আয়তকার গাড়ি, রুদ্ধতাপ প্রক্রিয়ার সৃষ্ট ঠান্ডায় জমানো রঙ-চড়ানো বরফ, আমাদের ছোটবেলার প্রিয় আইস-ক্রীম | খোকার চোখে পরে তা জানলা দিয়ে, আর ব্যাস চোখ দুটো আনন্দে জ্বলে ওঠে |
এবার প্রশ্ন হলো, খোকা আইস-ক্রীম খাবার বায়না ধরেছে তা তো বুঝলাম তবে 'ফোরনং' কি? আইস-ক্রীম আবার 'ফোরনং' হলো কবে?
তখনকার দিনে বর্ণপরিচয় ব্রাত্য হয়ে যায়নি, তাই অ-আ,ক-খ জ্ঞান তা থেকেই হতো | খোকার মাথা ণত্ব বিধান-এর উপযোগী হয় নি বোধ হয়(আসলে জিভে জড়তা কাটেনি) তাই 'ফোন-নং' পড়ে উচ্চারণ করে 'ফোর-নং' | পুরানোদিনের আইস-ক্রীম গাড়ির মাথার ডিম্বাকৃতি ছাউনিতে কে জানে কোন যুক্তি মেনে 'ফোন-নং - ' কথাটি লেখা থাকতো,যদিও আদতে তার পাশে কোনো নম্বর দেওয়া থাকতো না | খোকা শুধু ঐটুকুই পড়তে পারে জানলায় বসে, তার ধারণা জন্মে জিনিসটার নাম হয়তো 'ফোর-নং' , এবার এ ধাঁধা তার বাবা-মা বুঝবে কি করে? যাইহোক শেষমেশ সমস্যার সমাধান হয় এক সবজান্তা মামার কৃপায় | খোকার কান্না থামে, আর বাবার কাঁধ থেকে ভুত নামে || ওঁম শান্তি ||

Comments