top of page

অর্বাচীনের পদাবলী…

  • Writer: nitishb
    nitishb
  • Sep 19, 2021
  • 1 min read

Updated: Apr 13, 2022

শৈশব


মা,

অঙ্কুরিত বীজের মত,

যত্ন করে সামলেছিলে |

নিজের যা সব পাওনা ছিল,

একনিমেষে ভুলিয়ে দিলে |

ভাবলে তুমি, হোক একদা

প্রিয় সেসব স্বপ্ন দেখা |

আজ শুধু এক স্বপ্ন আসল,

শিশুর রবের স্নিগ্ধ-কেকা ||

বাবা,

অচেনা মানুষ অচেনা প্রীতি,

কে জানে কি তার ছিল প্রকৃতি,

বাসত ভালো শুনতে পেলাম |

হলো না ঠাহর, ভয়ের গুলাম

হৃদয় তখন ; বেশী ভাবিনি,

চোখে হারাতাম পেলে জননী ;

দিল্লি না কি নিয়ে গেছিল,

স্মৃতির পাতায় পড়েছে ধুলো ||

ছোটমাসি,

ছোট্টবেলার ঘুরতে যাওয়ার,

মূল ঠিকানা মাসির বাড়ি,

তার সাথে যেন সখের লড়াই

কথায় কথায় করেছি আড়ি |

যা জানি সবই মায়ের বলা,

জন্ম থেকে যে পথ চলা ;

মাসির হাতেই সূচনা যে তার

ভুলি না যেন সেই উপকার ||

দিদি,

হিংসুটে এক তুচ্ছ খেয়াল,

ছোট্ট হাতের ডিঙিয়ে নাগাল,

জীবন-খেয়ার আনন্দ পাল,

হ্যাচকা টানে ছুটিয়ে দিলি |

ভাগ করা সেই দিনের আমেজ,

কখনো অলীক কখনো নিরেট ;

অথবা শুধুই খেয়ালী সময়,

আপন করে কাটিয়ে নিলি ||

প্রতিবেশী,

অবাক মানুষ, কতশত ভীড়,

জানতে কিসব গুপ্ত খবর;

অন্নপ্রাশনে কত দাদা দিদি

কবজা করলো আমাদের ঘর |

ডিঙ্গাতে বছর ছোট্ট-বেলার,

হাত ধরাধরি করলো সবাই,

কানাই মামার সাধের বাড়ি-

আমি সেখানে সকলের 'ভাই' ;

সেদিনের কথা ভোলা যায় না,

জমা সেই স্মৃতি আমার খাজানা ||

আমি,

যা সব দেখে অবাক চোখে,

অর্থ খুজি হন্যে হয়ে,

সরল সবই বয়স-মাফিক

শিশুর সবই যায় গুলিয়ে

মেলার মত হিসাব যত,

চোখের জলে ভাসিয়ে দিয়ে,

পোষ না মানা সম্ভাবনা

মুঠোয় রেখে গুছিয়ে নিয়ে ||

... সাঙ্গ হলো ছোট্টবেলা ***** মিষ্টি মৃদু কালের পালা ...


কৈশোর


মা,

খেয়াল খুশির ভীষণ অভাব

সব মেনে নেওয়া মায়ের স্বভাব

তবে অযথাই পড়তে বসানো,

মায়ের ধর্ম যেত না ভুলানো,

আর কখনও বা ঘুরতে যাওয়া,

বড়মাসি বাড়ি বেলঘরিয়া |

সুখের দিনের প্রতিচ্ছবি

মা-ই জীবনের প্রথম ‘নবী’|


তোমায় তখনও বুঝতে শিখিনি

যত বুঝি তত অবুঝ খেয়ালে,

জীবনের মানে খুঁজি আলগোছে,

বুঝি কিছু নেই তোমায় হারালে |

মা আমি যত হচ্ছি বড়ো,

জীবন যাচ্ছে তত গুলিয়ে,

সে সময় কত সুখী ছিল মন,

সুখ বাঁধা ছিল তোমার আঁচলে ||

দিদি,

কমরেড তুমি জানো নাকি ভাই ?

সমাজ গড়ার করছ লড়াই,

এদিকে হামেশা শতেক নারীর

চলছে লড়াই প্রথম সারির !

হার না মানার সে এক নেশার,

সম্বল করে যাদের পসার;

তাদের মত আমার দিদি,

স্বতঃস্ফূর্ত স্রোতের নদী |

বন্ধু বলতে যা সব বুঝি

সবের হদিস 'ও' তেই খুজি ;

সকালবেলায় স্কুল-এর তাড়া,

যুদ্ধ করে খাওয়া সাড়া,

সন্ধ্যে হলেই গানের সুরে,

ছোট্টঘর ফেলত ভরে,

মায়ের মারে ভাগ বসানো

তখন শুধুই দিন কাটানো,

পড়াশোনা আর ঝগড়া করে

আর ছিল TV দেখার 'ঘোরে' ||

অর্ক,

কৌতূহলের শেষ নেই কোনো,

কিছুটা জানা, বাকিটা বানানো;

গল্পের ঝুড়ি সাজিয়ে গুছিয়ে,

স্কুলের আসর তুলতো জমিয়ে |

চেনা প্রকৃতির অচেনা ছড়ার

ছন্দের আসরে তোর ওই পসার

আজও মনে পরে সেদিনের কথা

বাস্তবে যেন ছিল রূপকথা ||

স্কুল,

যত রাগ যত জমা যন্ত্রনা

সবই তোর প্রতি তোকেই নিশানা -

করে দিন কাটি | পরিপাটি সেজে,

ধুলো পড়া স্মৃতি নিয়ে ঘষে মেজে;

বিকোনো সময়ে বিফল আবেগে,

জমা আক্রোশে শুধু যাই রেগে |

ছোট-খাটো দাবি, জানি হাবিজাবি

আজ তাই সব সম্বল করে

প্রত্যহ এই জীবন-নাটক

করে যাই আমি, চলে যাই লড়ে

যেটুকু সময় মডার্ন-এ ছিলাম

ততটাই আমি, বাকি তো গোলাম

টাকা ও যশের, আর একটু সুখ

খুঁজে যাই আজ নিয়ে ভরা বুক

বাবা,

বড় হতে বড় সময় লাগে

অথবা লাগে না, সময় এলে

কালের নিয়ম অমোঘ বড়োই

কে কার বাবা? কে কার ছেলে?

যেদিন তুমি গেলে চলে

হলাম বড় এক নিমেষে

কান্না ঝরেনি এক ফোটাও

মূল্য বুঝিনি সেই বয়সে

পয়সার টান দেখিনি আমি

মিথ্যে বলে, আজ আর কি লাভ ?

কষ্ট বুঝিনি কাকে আর বলে

মার আমার বড় হিসাবি স্বভাব ||

​... নাটুকে জীবন, নোংরা ঝামেলা ***** আসছে এবার যুবকের পালা ...


যৌবন


আমি,

যুগের হাওয়ার বিশাল গতি

মানবো কেন আজ আর নতি?

খানিকটা তো মনের বিকার

সব নাই মানি,কিছুটা স্বীকার

করেই দেখি সেই হুজুগে

পঙ্গপালের আগুনের সুখে |


স্বার্থানেষী যুবক আমি

হুঙ্কারে তবে অন্তর্যামী,

সাবধান বাণী, মানিনি কখনো

ঠেকে শিখেছি, সবই বানানো |

বিশ্বাস আজ বিলাসিতা এক

মন বলে বাছা আগে ভেবে দেখ -

যা খুশি না হয় বলছিস আজ

চিরকালই তোর রবে এই ঝাঁঝ?

তর্ক লড়ি নিজের সাথে

পরে কি হয়, কি এসে গেলো তাতে

আমি তো আমার আজকেটা জানি

করেছি যা ভুল নতশিরে মানি

তাবলে আমায় আটকানো যাবে

সেটা সম্ভব, যে এটা ভাবে

তার কাছে শুধু দাবি একটাই

তুমি শুধু ভাবো, আমি লড়ে যাই ||

মোহ,

ক্ষনিকের এক মোহ ছিল বটে,

মাথা খাটাই নি, তা যখন ঘটে,

খাটালে হয়তো আরেক জীবন

আজ আমার হতো অন্য ধরন |

দ্বিধা আজ আছে, নেই তাতে ধার

ঐযে বলি, স্বভাব-ই স্বীকার

করে নিয়ে সব, এগিয়ে চলা |


আমার জীবনে যাত্রা-পালা লেগেই থাকে,

অন্যেরা দেখে আমি বাঁচি,

এক উন্মাদ ঝোঁকে |

ইতিহাস মোরে স্বপ্ন দেখায়

পথ ছুটে চলি উত্তেজনায় |

ঘোরার সাথী বন্ধু আমার,

যে যখন জোটে, অথবা একার

সাহসবলেই কাটাই সময়

সেটা সুখে বা দুর্ভাবনায়

দিদি,

কালের দোষে অকাল শোকে

দিদিও গেলো ঘরটা ছেড়ে |

নিজের জীবন সকলেরই দাবি

তাবলে ও ক্ষতি মানবে কে?রে

বিবাহ নামক 'সামাজিকতা'

দিদি নিলো কেড়ে, হঠাৎ অযথা

যাহোক ওতো সুখেই আছে

তাছাড়া কেই না শুধু সুখ যাছে?


সাহসী অপার অবদান স্রোত

জীবনে আজও জমা হয়ে চলে,

মনে হয় না সে কল্পতরু -

শেষ হবে বলে এ-জীবনকালে |

এর চেয়ে বেশি ভাষার বয়ান

দিতে অপারগ, এ যুবক প্রাণ |

কমুনিস্ট,

সমাজের এক ব্যতিক্রমী

চিন্তাধারার হতাশ ফসল |

ঘটনা ঘটেছে, গড়িয়ে আজকে

কোথায় গিয়েছে কোথাকার জল !

দিদি নেই তাই, মন ভোলাতে; পাতা ভরি,

হিজিবিজি লেখাতে |

রাত হলো, মা খিটখিট করে

পারবেন তিঁনি ঘুম পাড়াতে ??


ঝগড়া বিবাদ মানুষের রোগ |

আমার জীবনে, সত্য-অমোঘ

বলে কিছু নেই, হয়তো বা ভাবি

ইমোশন নদী, আমি খাই খাবি

সাঁতরাতে আমি শিখতে চাই না,

নাটক জীবনে ধরেছে বায়না |

স্বপ্ন > দুঃস্বপ্ন,

দেওয়ালে আমার নাম লেখা ছিল,

ছোপছোপ কিছু চিহ্নের সাথে |

বুঝার চেষ্টা হারিয়েছি আমি

ভাবি যত তত কথা মনে বাধে |

৮/৮ ঘরটা আজ, আছে হয়তো সেখানেই প্রায়,

মরুতে হাটছি, সময় কাটছি, চাতকের ন্যায়

আশা রয়ে যায় |

ছন্দ আজ রচার চেষ্টা, মানুষ সেজেছি

দেখো এ বেশটা !

ঘুরছি যে পথে, প্রশ্ন যা রটে

উত্তর বটে, জানা যায়নি |

দ্বিধা নেই আর, জমা নেই কাজ;

শেখার শেষটা খুঁজেও পাইনি |

নৌকা,নাবিক ও নদীর প্রকৃতি

কোনো মিল নেই, আলাদাই সবই ||

দৌড়বিদ,

সকাল সকাল চোখ খুললেই,

প্রথমেই আমি ভাবি

স্বপ্নেরা কাল কোন সাহসে

জানালো অযথা দাবি !

ঘুম থেকে উঠে, জল ঢালি মুখে

দৌড়াতে যাই কোন এক ঝোকে;

মেডেল পাওয়ার নেশায় মেতেছি,

খেলোয়াড় হবো স্বপ্ন গেঁথেছি |

ছোট্টবেলার দুঃখ ঢাকতে

অর্থ লোটাই, গর্ব হাঁকতে,

আর ছুটি আমি পাহাড় চূড়ায়

যশের নেশা, নিমেষে মেলায় |

পাহাড়,

নতমস্তকে প্রণামী তোমায়

প্রকৃতি পরম জননী,

শিখাইলে তুমি, মুড় বিবেকেরে,

মহিয়সী কেন ধরণী |

কতশত কাল কত পথ হেঁটে,

ভুলেছিলাম এই তথ্য

মানুষ বড়োই হীনমন-ধারী,

জীবনের এক সত্য -

সব চেয়ে জ্ঞানী সেই,

যেহ জানে সুখের সহজ পথ্য

পেতে হলে সুখ, সেথা যায় যেথা,

মানুষ আজও ব্রাত্য ||

হৃদয় তোমার উল্লাসীবে,

উৎগ্রীব হবে সুনয়ন,

প্রকৃতির ওই শোভা সব দেখে

উদারতা পায় হীন মন |

নেশায় মেতে ছুটে-ছুটে আমি

হামেশাই তাই সেথা যাই

স্বার্থপরতা ক্ষনিকের মতো,

জানিনা কিভাবে দি লুকাই |

অর্ণব,

কি তব চিন্তামণি ?

কি তব জীবনদীশা ?

ফনি তব বিমর্ষ কেন ?

'ফেউ' ভাব নাও হামেশা |


ভাব দেখি বসুন্ধরা

ভোগে আজ বীর-ই কেন ?

সংকটে তব আমি-ত্ব

নাকি তব সবই ফেক সাজানো ?


উঠো দেখি সজাগ হয়ে

দেখো চেখে জীবন-বারি

নামে তব ঘূর্ণি আছে

নও তুমি বাছা আনাড়ি ||

প্রিয়তমা,

সুগভীর তোর চাহনি দেখেই

মনের মাঝে মৃদুল বাজে |

ভাবছি মনের গতি হবে কি

সাজবি যখন বেলায় সাঁঝে |

হদিশ মনের হারিয়ে 'পথিক'

'প্রশ্ন' ফুলে গাঁথছে 'মালা' |

ভাবনার ঢেউ ছেড়েছে যে তট

তোর মুখ চেয়ে, জীবন-ভেলা

ভাসিয়ে আমি চিন্তা ছাড়ি |

কোথায় যে তীর, কোন মুলুকে

আমার তো সুখ কলমের টানে,

আর যদি পাই, ঠাঁই ওই বুকে |


Comments


আমার সম্পর্কে

পেশায় আমি সফ্টওয়্যার গুণমান বিশ্লেষক | তুলনামূলক ধর্ম,  সামাজিক ইতিহাস, ল্যান্ডস্কেপ ভ্রমণ এবং অরিগামিতে আমার অভিরুচি।

 

আরও পড়ুন

  • White Facebook Icon

© 2018-2022  নীতীশ ভট্টাচার্য

bottom of page