বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে ...
- nitishb
- Feb 21, 2021
- 2 min read
Updated: Jan 23, 2022
আমার কৈফিয়ত
বাংলা নিয়ে ভাবতে বসেছিলাম, ভেবে দেখলাম খুব একটা জানি না | যাও জানি ভুলতে বসেছি | আশ্চর্য হলেম, তারপর লজ্জিত | আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৯৫২ কিছু বোকা লোকের কথা আরেকবার মনে পরে গেলো | ভাষার জন্য কেউ আবার প্রাণ দেয়? প্রাণ দেয়ার কত ভালো ভালো বাহানা আছে - প্রেম, অভাব, টাকা, স্বপ্নভঙ্গ | বিপ্লবেও লোকে দেয় বইকি | তবে সে বিপ্লব আনে মূল্যহীন ক্ষণিক পরিবর্তন অথবা, আরও স্বপ্নভঙ্গ | কিন্তু ওই বোকা লোকগুলো ১৯৫২ এ বিপ্লব করেনি, মানে সেই অর্থে নয় | তাদের অস্ত্র ছিল না, রাজনৈতিক দোল ছিল না, ছিল না অর্থনৈতিক কোনো কারণ | শুধু একটি ভাষা আর সেই ভাষাকে কেন্দ্র করে নিজেদের সংস্কৃতি বাঁচাতে - দিয়েছিলো তারা আত্মাহুতি | যা ক্রমে জন্ম দিয়েছিলো এক বিপ্লবের | আমি সেই লোকগুলোর দেশবাসী নই, আমার পূর্বপুরুষেরা ছিলেন যদিও | তাঁদের জন্য বিশাল কষ্টও অনুভব করি না, যা প্রত্যক্ষ করিনি তা নিয়ে চোখের জল ফেলার আদিখ্যেতা আমার আসে না | তবে তাদের ভাষার কথা বলি বলে এবং তা আমার মাতৃভাষা বলে গর্বিতবোধ করি | নাজির মাহমুদ-এর একুশের গান 'বায়ান্ন' শুনে মনে না জানি কোন চেতনার উদয় হলো, শুরু করলাম এই লেখা লিখতে | এ লেখা উৎসর্গ করছি আজ অমর ২১-শে, '৫২-র সেই বোকা লোকগুলোকে |
মূলবিষয়গুলির সংক্ষিপ্ত সূচি
- বাঙালির ভাষা - সুনীতিকুমারের পদানুসরণে
- বাঙালির ইতিহাস (কিছুটা) - প্রামাণ্য কিছু নয়, সবই বই পড়া
- স্কুল থেকে - মডার্ন (পার সার্কাস) ও হিন্দু (কলেজ স্কয়ার)-এর মেলবন্ধনে
- আ-মরি বাংলা ভাষা (যা খুশি তাই)
ভাষাবৃক্ষের সুবর্ণ সেমন্তী : 'বাংলা'
বাংলাতেই আগাগোড়া লিখবো ভাবছিলাম, বিসমিল্লাতেই গলদ ঠেকলো | ভাষাবৃক্ষের বহু ডালপালা, তাতে আবার শুধু একটি করে ফুল নয়, গুল্মরাজি বিকশিত | বাংলার কথা নাহয় লিখবো বাংলাতেই কিন্তু ভাষাবৃক্ষের সম্পূর্ণ বর্ণনা বাংলায় করা - এই আনকোরা লেখকের ক্ষমতার বাইরে | 'অথ কিম !' গাছের কথা না বলে কি ফুলে আশা যায় ? সেমন্তী প্রস্ফুটনে যে শিকড়ের যোগ |
ভেবে দেখলাম বাংলাকে ভালোবাসি বলে তো ইংরেজিকে অবজ্ঞা করতে হবে তা নয় | তাছাড়া শুরুতেই নিজের সীমাবদ্ধতা শিকার করার মধ্যে একটা লজ্জামিশ্রিত সাহস আছে বইকি | সব ভেবে চিনতে আপোষ করে, এঁকে ফেললাম -

মোটামুটি ভাবে ৭ হাজার জীবিত ভাষা ভাষাকে মুখ্য ষোলোটি গোষ্ঠীতে ভাগ করে দেখা গেছে ভারতে প্রচলিত সকল ভাষার বেশিরভাগকেই ইন্দো-ইউরোপীয় অথবা দ্রাভিডিও ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত |এই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে পরে ৪৪৫-টি অনন্য ভাষা এবং দ্রাবিড়-এর মধ্যে ৮৫-টি |

উল্লেখিত ৪৪৫-টি ভাষার মধ্যে ইন্দো-ইউরোপীয়ের যেই অংশটি ভারতে অত্যাধিক হরে ব্যবহৃত হয় তা 'ইন্দো-আর্যন'; যা হলো গিয়ে ইন্দো-ইউরোপীয়ের - ইন্দো-ইরানিয়ান উপশাখার উপশাখা | ইন্দো-আর্যন এ কথা বলে ভারত,পাকিস্তান,বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও নেপালের বেশিরভাগ জনবসতি |

পর্যালোচনার সুবিধার্থে ইন্দো-আর্যনকে আরো ভাগ করা হয়েছে বহু উপবিভাগে | বাংলা-অসমীয়া অংশ পূর্ব-ইন্দো-আর্যন ছত্রের মূল উপবিভাগ |
আর একটি ধাপ নামলে ডালের শেষ পুস্পটি বাংলা, তবে আমরা নামবো দুইটি ধাপ | ফুলটিকে খুঁজে পেয়ে তার পল্লব অবধারণার্থে |

চাটগাইয়া, চাকমা ও সিলেটি কে বাংলার অন্তর্ভুক্ত ধরবো না স্বাধীন ভাষা, তা নিয়ে বাদানুবাদের শেষ নেই | কিছু কারণ রাজনৈতিক হলেও, বেশিরভাগ আমার মানবিক ও সাংস্কৃতিক মনে হওয়ায় আপাতত আলাদাই ধরলাম | আপনারা চাইলে একসাথে তাদের সকলকেই বাংলা বলে ধরতে পারেন, আমার তাতেই কিছুমাত্র বিরাগ নেই | অন্যদের থাকতে পারে |
এবার চলুন পাপড়ির বিকাশ দেখি -

ইচ্ছা আছে আরোও বিস্তারে লিখবো প্রতিটি উপভাষা নিয়ে | সময় সাপেক্ষ স্বপ্ন, তবে আমার ফাঁকি দেওয়ার অজুহাত নেই |
ক্রমশ....
যে উৎসগুলির সাহায্য নিয়েছি -
১. মডার্ন স্কুলের সুনীল গাঙ্গুলী স্যার-এর ক্লাসগুলির স্মৃতি,
২. ক্লাস ৯-১০ এর ব্যানার্জি স্যার-এর কোচিন-ক্লাস-এর স্মৃতি,
৩. উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ - শ্রী বামনদেব চক্রবর্তী,
৪. উইকিপিডিয়া |
Comments