top of page

|| ভুতুড়ে সংলাপ ||

  • Writer: nitishb
    nitishb
  • Jan 23, 2022
  • 4 min read

Disclaimer : কিশলয় ই-পত্রিকা কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত |

ব্রহ্মদৈত্য: আরে, মামদো দেখি, আছো কেমন ছোড়া?

মামদোভুত: পেন্নাম ঠাকুরমশাই, আর থাকা, সেতো আপনাদেরই আশীর্বাদে |


ব্রহ্মদৈত্য: তা চললে কোথায়? চোখ লাল দেখছি | বলি ঘুম-টুম হচ্ছে তো আজকাল? নাকি সারারাত উড়ে বেড়াচ্ছ?

মামদোভুত: ঠিকই ধরেছেন, ঘুম আর হচ্ছে কোথায়, বরং দুঃস্বপ্ন দেখছি শুলেই |


ব্রহ্মদৈত্য: সেকি হে !! এ দেখি পেশাকেই রোগ বানিয়েছ | পই-পই করে বলেছিলুম, লোভ করো না | কোথায় লোক কে দুঃস্বপ্ন দেবে, সে কিনা নিজেই নিয়ে বসলে !!

মামদোভুত: আপনিই বলুন, একদল মিনসেদের কইতে শুনলাম, শ্মশান ভেঙে প্রোমোটিং করবে | ঘর ছাড়া হব যে তাহলে |


ব্রহ্মদৈত্য: আঃ !! জ্বালালে বটে, ব্যাকরণ জ্ঞান সব জলাঞ্জলি দিয়েছ দেখছি | ঘর ছাড়া নয়, শ্মশান হারা বল | ঘরছাড়া হয়েছ সেতো নয় নয় করে ছয় কুড়ি কাল হলো |

মামদোভুত: (জিভ কেটে)যে আজ্ঞে, ঠিকই কইছেন, ওই শ্মশান হারা |


ব্রহ্মদৈত্য: সময়কালের কিছু খোঁজ রাখো না দেখছি | বলি, নতুন ছেলে-ছোকরা যারা আসছে তাদের সাথে কথা-টথা বল কি!!

মামদোভুত: সে আজ্ঞে একটু-আধটু, মাঝে-সাঝে, আসলে জীবদ্দশায় একটু লাজুক ছিলেম কিনা |


ব্রহ্মদৈত্য: তা কে তোমায় এখন সংসার পাততে প্রেম-পিরিত করতে বলছে? বললাম আমি ছেলে-ছোকরা দের কথা; অমনি তোমার মন শাকচুন্নিদের দিকে গেলো | আদিখ্যেতা আর সয় না | যাকগে, বাজে কথা বাদ দাও | বলি যে, গত-পরশু ওই আটকুঁড়ের বেটা হাজমাতুল্লার সাথে আলাপ হলো, চেনো তাকে?

মামদোভুত: আজ্ঞে না |


ব্রহ্মদৈত্য: তা ভালো লোককে চিনবে কেন, এখুনি সরলা দাসীর নাম নিতেম, তো সঙ্গেসঙ্গে চিনতে, পরের বিবাহিত বৌ, তাও তোমার লালসা কম নয় |

মামদোভুত: তা না ঠাকুরমশাই, বিয়া তো মরার আগে ছিল, তাই শাকচুন্নি হইছে, বরতো সগ্গো পাইছে, সতীর পুণ্যে, এখন তিনি কুমারী কিনা..


ব্রহ্মদৈত্য: চোপ বেয়াদব, 'বাঙ্গালকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছো'.. বিয়ে-টিয়ে ছেলেখেলা নাকি !! সাতজন্মের সম্পর্ক, আমারও প্রায় হতে চলেছিল | তাহলে আর তোমাদের সাথে ব্রহ্মদৈত্যি হয়ে দিন কাটাতে হতো না, আমিও সতীর পুণ্যে স্বর্গ পেতাম |

মামদোভুত: আজ্ঞে তা যা কয়েছেন, আপনি হলেন গিয়ে কুলীন বংশধর, তা শুনলাম আজকাল আর মর্তে ওসব মানে না |


ব্রহ্মদৈত্য: ঠিকই শুনেছ, সবই পলিটিক্স, দুনিয়া টাই জাহান্নামে গেলো | মামদোভুত: (হাসি লুকিয়ে) তা বটে, তা বটে | ব্রহ্মদৈত্য: তা যাক, হাজমাতুল্লায় আসি | সে মরেছে ১৯১৯ এ, অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধ | ওর বাপ়্ ছিল কাবুলিওয়ালা | ১০০ বছর পর তালিবান-টালিবানের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে, ভাবলো পূর্বপুরুষের কর্মস্থান দেখবে | তাই এসেছে এই বাংলা মুলুক, বেড়ে ছোকরা বটে | বললো হালে-ফিলে নাকি ওদিকে প্রচুর আফগানী পোলা পান মরেছে, কোন এক অপদার্থ লাদেনের পাপে | তা হালার পো, পাপ করে কে, ভোগে কে !! মামদোভুত: আহা রে, সত্যিই তো.. ব্রহ্মদৈত্য: তো তেনাদের কর্তারা নাকি সেখানে কবরখানাকে সেই পোলাপানের স্মৃতিতে উৎসর্গ করেছেন, তাই সেটা কোনোকালে ভাঙা-টাঙ্গা যাবে না | তা বলিকি তুমি রটিয়ে দাও এই শ্মশান খানা কোনো কিছু একটার উদ্দেশে উৎসর্গ, তাহলে এটাও বেঁচে যাবে এই যা | মামদোভুত: মতলবটি ভালো বাত়্লেছেন ঠাকুরমশাই, কোনো এক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে পুড়িয়েছিল এখানে রটাতে পারলেই কেল্লা ফতে, মরা হাতির দাম এদেশে এমনিই লাখ টাকা | তা যদি দোষ না নেন একটা প্রশ্ন করি? ব্রহ্মদৈত্য: করো, আটকাচ্ছে কে? মামদোভুত: তা আপনি তো এতো জ্ঞানী মানুষ, তাহলে এখানে আসলেন কি করে? ব্রহ্মদৈত্য: মারা গিয়ে !! মামদোভুত: আহা তা তো নিশ্চই, কিন্তু মরিলেন কিসে? ব্রহ্মদৈত্য: মদ্যপ অবস্থায় যান চালিয়ে | মামদোভুত: হা !!! সেকি, আপনি এসেছেন তো প্রায় দুই শতাব্দী হলো, সেযুগে তো সব ছেকরা-গাড়ি, তার ওপর আপনি পৈতাধারী বামুন | ব্রহ্মদৈত্য: ওই হলো আর কি | কারণ-সুধা বুঝলে, সেদিন ছিল কালীপূজা, যজমানের ঘরে উল্লাস চলছিল, আমি নিরামিষাশী, এককোনে পরে ছিলুম | তা যজমানের নায়েব, রসিক মানুষ; কয়েক চুমুক খাইয়ে দিলেন ছেকরা-গাড়ির ঘোড়াগুলিকে | পূজা শেষে ফিরছিলাম গাড়ি করে, বেলাগাম দৌড়াচ্ছিলো জন্তুগুলি | প্রায় খাদে ঝাঁপ দেয় আর কি | আমি হেঁকে বললুম 'থাম' | পেয়াদা লাগাম দিলো টান, ঘোড়া গুলো ধপ করে থেমে গেলো উল্টো দিকের হেচ্কা টানে বাক্সগাড়ি সমেত উড়ে গিয়ে পড়লুম খাদে, আর কি সোজা যমালয়ে | মামদোভুত: আহা গো, কি দুঃখু, কি দুঃখু | ব্রহ্মদৈত্য: আরে বল না, সেতো তো তাও এককাল হলো, তাই কষ্ট ভুলেছি | তা ছোকরা তুমি এলে কিভাবে? মামদোভুত: আর বলেন না, আমারি ভুল | 'বেঙ্গল-গ্যাজেট'-এ পড়লুম বিলেতে কোন এক ব্যাটা এডিসন 'বাল্ব' বানিয়েছে, সে নাকি তারে গুজলেই জ্বলে | আমিও ভাবলুম মেজো শালিটিকে ফন্দি দেখাবো, 'বাল্ব' খুলে তারে আঙ্গুল গুজলাম, জ্বলে উঠবে ভেবে | ব্রহ্মদৈত্য: তারপর? মামদোভুত: কি জ্বললো জানিনে, আমি নিভে গেলুম | চিত্রগুপ্ত জানালেন সগ্গে মেরামত চলছে, ঘর কম, বিশাল লাইন | দেখলুম বাইরে দাঁড়িয়ে যীশু, বুদ্ধ আর কেষ্ট ঠাকুর আড্ডা দিচ্ছেন, যমরাজ বৌ নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছেন | জানতে গেলাম করবো কি? তেনারা বললেন নরকে যেতে পারো - নেতারা আর উকিলবাবুরা আছেন, কোনোরূপ চুক্তি করে সেখানে আবাস খোঁজো | বা মর্তে ফিরে চড়ে বেড়াও | ব্রহ্মদৈত্য: ওহ!! আমাকে তো হালা বাছতেও দিলো না, সরাসরি পাঠিয়ে দিলো, কি অপমান |

মামদোভুত: ভাবলুম মর্তেতো তাও কখনো-সখনো নেতা বা উকিল মরে, নরকে তো চিরকাল থাকবে, তাই এখানেই ফিরে এলুম | ব্রহ্মদৈত্য: তা ঠিকই করেছো | তা কি যেন, ইচ্ছে আমারও অনেক ছিল, বিয়েটা প্রায় ঠিক ছিল, বছর ৮- এর মেয়ে | ফিরে এসেই তাকে দেখতে গেলাম, সে হবু শশুর হালা মহা বদ, বিয়ের খবর পুরো চেপে গেছে | অন্য পাত্রে কন্যাদান করেছে | আবার ভাবি তার দোষও কি, কুল বাঁচাতে যা করতে হয় আর কি | মামদোভুত: তা মশাই আপনারা বড় সেকেলে, এখন ওসব ফ্যাচাং নাই কুলের | ব্রহ্মদৈত্য: ওহ তাই নাকি ! এটা তাহলে হাজমাতুল্লার দেশে হয়নি এখনো, ও ব্যাটাতো বললো না কিছু | মামদোভুত: হয়েছে হয়তো - মানে না, আইন তো কতই আছে, মানে কে | ব্রহ্মদৈত্য: তা ঠিক বলেছো | তা বাবা আমারতো বিয়ে হয়নি, কোনোকুলে কেউ আর বাকি নাই, কিন্তু তোমারও তো দেখি মহালয়াতে কপালে কিছু জোটে না, ভাগাড় শুন্য, তা কেন!! মামদোভুত: আর বলেন কেন, ১০০ বছর হয়ে গেলো মরেছি, দু'পুরুষের নামই আজকাল কেউ আর মনে রাখছে না | তা আমার পরে তো পাঁচ-ছ'পুরুষ হলো | ব্রহ্মদৈত্য: হতভাগা সমাজ বটে, আমাদের উচিত আগেকার মতো লোকজনকে ভয় দেখানো | শুনছো না আজকাল দেশেদেশে নেতাদের খবর, ভয়ের মাধ্যমে বিভাজন করতে হবে | ও ছাড়া সম্মান পাওয়া যায় না | মামদোভুত: ঠিক বুদ্ধি দিয়েছেন | তবে আজকাল জ্যান্তরাই জ্যান্তদের এতো ভয় পায়, আমাদের ভয় পাওয়ার সময়ই নেই তাদের কাছে | ব্রহ্মদৈত্য: তাহলে বলছো, সে পথেও লাভ নেই, তাহলে অথ কিম !! আর করণীয় কি? মামদোভুত: চলুন গিয়ে বায়োস্কোপ দেখি, আজকালকার সিনেমা-হলে, নতুন কি চলছে জানবো | ব্রহ্মদৈত্য: কোনো খোঁজই রাখো না দেখছি, অতিমারী এসেছে, সব হল বন্ধ, কয়েকটা যাও চলছে তাতে আধুনিক বাংলা সিনেমা চলছে | মামদোভুত: তাই দেখি তাহলে !! ব্রহ্মদৈত্য: আঃআঃ, আহাম্মকই বটে তুমি, আমাদের কাজ ভয় দেখানো, ভয় পাওয়া নয় | আজকাল টালিগঞ্জে যেসব করছে - কমেডি, ট্রাজেডি যাই হোক, দেখলে আমাদেরই পিলে চমকে যাবে | এর চেয়ে চলো তোমার সাথে গিয়ে শাকচুন্নিদের সাথে আড্ডা দি | জীবনকালে তো সে সখ মিটলো না, এখনই মেটাই | মামদোভুত: তা খাঁটি কথা কইছেন, ঠাকুরমশাই, তাই করি চলেন |

 
 
 
About Me

Software Quality Analyst with a penchant for comparative religion, social history, landscape travel and origami.

 

Read More

 

  • White Facebook Icon

© 2018-2022 Nitish Bhattacharjee

bottom of page